
১১
কৈশোর-যৌবনের সন্ধিক্ষণে সকলেই বোধহয় কোনও না-কোনও হীনমন্যতায় ভোগে। কেউ আমাদের ধর্তব্যের মধ্যেই আনছে না। আমরা বয়সে ছোট, তাই কোথাও কোনও স্বীকৃতি নেই। কৈশোরের শেষ লগ্নে তাই স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ছটফট করতাম, যখন কেউ আর আমাদের নাবালক ভাববে না।
সাবালক হওয়ার সহজ রাস্তাটা ছিল সিগারেট খাওয়া। অথচ সেটা স্কুলজীবনে একেবারে নিষিদ্ধ বস্তু। অথচ কলেজে পৌঁছে দেখেছিলাম কেউ কেউ ডবল প্রোমোশন পেয়ে একেবারে হুইস্কিতেও পৌঁছে গিয়েছে। অন্তত বিয়ার পান করার ব্যাপারে। এই শাখাটিতে অবশ্য আমি একেবারেই অনভিজ্ঞ। আজও জানি না কিঞ্চিত্ মদ্যপানে কোন স্বর্গসুখ পাওয়া যায়!
প্রথম সিগারেটটি আমি স্কুলজীবনেই ধূমায়িত করে নিজেকে অ্যাডাল্ট ভাবতে শুরু করেছিলাম। শরীরের দিক থেকে কতখানি অ্যাডাল্ট হয়ে উঠেছিলাম মনে নেই, কিন্তু মনের দিক থেকে তো অবশ্যই।
আমাদের দাদাশ্রেণির সাবালকরা সিগারেট খেতেন বলেই সিগারেটের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম মনে করলে ভুল হবে। আসলে আমাদের হীনমন্যতা এ জন্যই যে, লেডিজ় সাইকেল চালিকা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান অল্পবয়সি মেমগুলিকে সিগারেট খেতে দেখতাম। কিছুটা আমাদের দেখিয়ে দেখিয়েই খেতো। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে আমরা যেমন তক্লি ঝুলিয়ে ওই মেমদের দেখিয়ে দেখিয়ে সুতো কাটতাম, ওদের ভয় পাওয়ানোর জন্য, তেমনই আন্দোলন মিইয়ে যাওয়ার পর ওই মেম ও মিসিবাবারা সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে আমাদের দিকে ধোঁয়া ছুড়ত, আমাদের ভয় পাওয়ানোর জন্যেই। জবাবে আমরা যে একটা সিগারেট ধরিয়ে তাদের দিকে ধোঁয়া ছাড়ব তার উপায় ছিল না। এক বাবা-মা’র ভয়, দ্বিতীয়ত স্কুলের হেডমাস্টারের বেত্রাঘাতের ভয়। কিন্তু সাবালক হয়ে ওঠার জন্য সিগারেট যে অবধারিত পথ, তা আমরা বুঝতে শিখেছিলাম আমাদের সেই বয়সেই।
লেভেল ক্রশিং পার হয়েই একটি বেশ বড়সড় সাজানো দোকান